আজ বুধবার, ২০শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সু সময়ে স্বার্থ হাসিল দুঃসময় দোয়া প্রার্থনা

সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাত:
ঈদের আগেই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হচ্ছে। এমন ভাষ্য শোনা গিয়েছিলো বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের মুখ থেকে। মুক্তি হবে কি হবে না সেটা মুখ্য বিষয় না। বিষয় কেন্দ্রীয় নেতাদের সুরে সুর মেলানোর মতো কাউকেই এখানো খুজেঁ পাওয়া যায় নি। যেমনটা বলাচলে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীদের ক্ষেত্রে। নেত্রীর মুক্তির দাবীতে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রাম তো দূরে থাক, বিএনপি সমর্থকদের সান্তনা দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের কোন ভূমিকা নেই। এতো নেতাকর্মী, পদ-পদবীওয়ালা নেতৃবৃন্দ ও সিনিয়র নেতারা থাকা সত্ত্বেও নেত্রীর মুক্তির দাবীতে ইফতার পার্টিতে দোয়া প্রার্থনা করে যাচ্ছেন তারা। তাহলে দোয়াটাই কী খালেদার মুক্তির জন্য যথেষ্ট, নাকি আন্দোলন-সংগ্রাম? খালেদার মুক্তির দাবীতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির করণীয় কী? প্রশ্ন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

তাদের মতে, ইফতার পার্টির আয়োজন করে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া প্রার্থনা করার পর ভুরিভোজ করে ঢেকুর ফেললেই খালেদার মুক্তি হবে না। মুক্তির জন্য প্রয়োজন কঠোর আন্দোলন। দলের সুসময় স্বার্থ হাসিল করে দুঃসময় দোয়া প্রার্থনা করা নেহাত বোকামি। এই রমজানে ইফতার পার্টির মধ্যে দিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব ছিলো। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের একত্রিত করে, তাদের উৎসাহ দিয়ে একসাথে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতে পারতো তারা। অথচ তা না করে উল্টো নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করছে তারা। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মতো পন্থীর রাজনীতি শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি।

তাদের মধ্যে কেউ এই পন্থী কেউ ওই পন্থী। যেই দল দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়ধরে ক্ষমতার বাইরে তাদের মধ্যে কি কোন্দল শোভা পায়? গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা না করে, দলীয় নেত্রীর মুক্তির কথা চিন্তা না করে তারা তাদের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করছে জণসাধারনের সামনে। একদিকে দলীয় নেত্রী কারাগারে ৩০ টাকার ইফতার করে, অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা ইফতার পার্টির আয়োজন করে বাহারি খাবারে ভুরিভোজ করে দোয়া প্রার্থনা করে। সমসাময়িক এ সকল বিষয়গুলো নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতকর্মীদের জন্য লজ্জার।

সচেতন মহলের মতে, ফেইসবুকে স্ট্যাটাস, মিডিয়ার সামনে মায়াকান্না ও ইফতার পার্টিতে দোয়া প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি কল্পনার মতো। এসকল বিষয়বস্তুতে বাস্তবতার কোন ঠাঁই নেই বললেই চলে। সত্যিকার অর্থে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার ফলে ভবিষ্যতে ক্ষমতার স্বাদ নেয়ার ইচ্ছা হারিয়ে গেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে থেকে। সেই সাথে হারিয়ে গেছে নেত্রীর মুক্তির দাবী জানানোর ইচ্ছা। কারণ কেউ এখন হামলা-মামলার শিকার হতে চায় না। কেউ আর দলীয় নেত্রীর জন্য জেল খাটতে চায় না। অথচ, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন বেগম খালেদা জিয়াকে মা’ মা’ বলে মুখে ফেনা তুলতেন এই নেতাকর্মীরা।

তারা এখন সেই মা’র কষ্ট অনুধাবন করে না। বৃদ্ধ একজন মহিলা যে কিনা বাংলাদেশ সরকারের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সে ১৫ মাস যাবৎ জেলহাজতে। এই কথাগুলোও যদি নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের স্মরণে আসতো তাহলে তারা অনেক আগেই জেগে উঠতো, ঘুমিয়ে থাকতো না। জনগণের সামনে নেত্রীর মুক্তির নাটক না করে, সবাই ঐকবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব। এমনটাই মনে করেন জেলার সচেতন মহলের লোকজন।